একুশে ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির মাতৃভাষা বাংলা রক্ষার জন্য সংগ্রামের দিন। পাকিস্তান সরকার যখন রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন এর বিরুদ্ধে বাঙালি ছাত্র-জনতা প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। এই আন্দোলন দিন দিন বিক্ষোভে রূপ নেয় এবং অবশেষে ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভাষার জন্য প্রাণ বিলিয়ে দেন অনেক মানুষ। পৃথিবীর ইতিহাসে এ এক অনন্য নজির। আর তাই একুশে ফেব্রুয়ারি এক রক্তাক্ত দিন হিসেবে ভাস্বর হয়ে ওঠে ইতিহাসের পাতায়।
ভাষা মানুষের যোগাযোগের প্রধানতম মাধ্যম। পৃথিবীর প্রতিটি জাতির যোগাযোগের নির্দিষ্ট ভাষা রয়েছে। সেসব ভাষায় মানুষ নিজের মনের ভাব-আকুতি-ভাবনা তুলে ধরে অন্য জনের কাছে।মনের ভাব প্রকাশ করতে একেকটি জাতি সমন্বিতভাবে যেই ভাষা ব্যভার করে সেটিই সেই জাতির মাতৃভাষা। মাতৃভাষা বা মায়ের ভাষার প্রতি মানুষের টান চিরকালীন। তবে পৃথিবীর ইতিহাসে শুধুমাত্র বাঙালি জাতিই নিজের মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার্থে অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছে তাজা তাজা প্রাণ। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বাংলার দামাল ছেলেদের তাজা রক্তে যখন রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল। যা বাংলা ভাষা ও বাঙালিকে এক অনন্য সম্মান আর মর্যাদা প্রদান করেছে।
একুশে ফেব্রুয়ারির ইতিহাস মানেই ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের বীজ, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসও। একুশে ফেব্রুয়ারির পথ ধরেই রচিত হয়েছিল বাংলাদেশ জন্মের অমর মহাকাব্য ১৯৭১ এর। ভাষা আন্দোলন এর ইতিহাস শুধু ১৯৫২ সালেই নয় এর ইতিহাস আরও প্রাচীন। এই ইতিহাস জানতে গেলে আমাদেরকে যেতে হবে ইতিহাসের অনেক বাঁক পেরিয়ে বেশ পেছনে।
ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই ভারতের বেশ কয়েকটি অঞ্চলের মুসলমানদের মধ্যে উর্দু ভাষার ব্যবহার ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর প্রভাব বাঙালি মুসলমানদের মধ্যেও পড়ে ব্যাপকারে। যদিও ভারত ভাগ হবার আগে থেকেই বাংলা ভাষার সমর্থক বাঙালিদের মধ্যে উর্দু বিরোধীতা শুরু করেন। এই বিষয়টি প্রথম প্রকাশ্যে আসে ১৯৩৭ সালে মুসলিম লীগের লক্ষ্মৌ অধিবেশনে। সেই অধিবেশনে উর্দুকে ভারতের মুসলিমদের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা বা সংযোগস্থাপনকারী ভাষা মনোনয়নের প্রস্তাব তোলা হয়। তবে এমন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন বাংলার সভ্যরা। এমনকি এমন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন বাঙালিদের নেতা শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক। আর এভাবেই সকলের অজান্তেই শুরু হয় নীরব ভাষা আন্দোলনের। যার চূড়ান্ত রূপ দেখতে পাওয়া যায় ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে।
যদিও মাঝে বেশ কিছুদিন উর্দু নিয়ে এই বিতর্ক থেমে ছিল অনেকখানিই। তবে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হবার কথা উঠতেই আবার জেগে ওঠে বাংলা এবং উর্দুর মধ্যে রাষ্ট্রভাষা নির্ধারণের আলাপ। ১৯৪৭ সালের ১৭ই মে তারিখে চৌধুরী খলীকুজ্জমান ও জুলাই মাসে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করার প্রস্তাব প্রদান করেন। এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও মুহম্মদ এনামুল হকসহ বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবী প্রবন্ধ লিখে প্রতিবাদ করেন৷ এদিকে জুলাই মাসে ঢাকায় মুসলিম লীগের বামপন্থীদের নিয়ে ‘গণ আজাদী লীগ’নামে একটি ক্ষুদ্র সংস্থা গঠিত হয়। এই সংস্থার ম্যানিফেস্টোতে বলা হয় ‘বাংলা হইবে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’।
তবে বাংলা ভাষা নিয়ে মানুষের মনে প্রথম সচেতন সামাজিক আন্দোলন দেখা যায় ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। সেদিন তমদ্দুন মজলিশ একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে যার নাম ছিল ‘ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা নাকি উর্দু?’ সেই পুস্তিকায় বাংলাকে পাকিস্তানের একটি রাষ্ট্রভাষা হিসাবে ঘোষণা করার দাবী হিসেবে দেখানো হয়।
তবে এর কিছুদিন পরই নভেম্বর মাসে পাকিস্তানের শাসকরা পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বাঙালিদের ভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে গৌরবে বহুবচনের মতো উর্দুর সাথে ইংরেজিতে লেখা খাম, পোষ্ট কার্ড, ডাকটিকেট, রেল-টিকেট, মানি অর্ডার ফর্ম ইত্যাদি ছেপে চালু করে দেয়। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় পাবলিক সার্ভিস কমিশনের তদানীন্তন সচিব গুড ইন ১৯৪৭ সালের ১৫ নভেম্বর তারিখে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার বিষয়াদি সম্পর্কে একটি সার্কুলার প্রেরণ করেন। এ সার্কুলারে ঐ পরীক্ষার জন্য সর্বমোট ৩১টি বিষয় দেয়া হয়, যার মধ্যে নয়টি ছিল ভাষা; এ সকল ভাষার মধ্যে হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি, জার্মান, ফরাসি এমনকি ল্যাটিন ও সংস্কৃতও স্থান পায়, কিন্তু স্থান পায় না পাকিস্তানের অধিকাংশ জনগণের মাতৃভাষা বাংলা। আর এই বিষয়টিই বাঙালিদের মনের মধ্যে জাগিয়ে তোলে নিজেদের অধিকার আদায়ের চেতনা, নিজের মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার প্রেরণা।
এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে নভেম্বর মাসের ১৭ তারিখ বাংলাকে পূর্ববাংলার সরকারি ভাষার করার দাবিতে পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এক স্মারকলিপি দেওয়া হয়। তাতেও কোন কাজ হয় না। এরপর ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথম সপ্তাহে তৎকালীন রাজধানী করাচীতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এই খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হলে ৬ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ, জগন্নাথ ইন্টারমিডিয়েট কলেজ ও অন্যান্য কলেজসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এক প্রতিবাদ সভা করে। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তমদ্দুন মজলিশের সম্পাদক আবুল কাসেম। বক্তৃতা করেন মুনীর চৌধুরী, এ.কে.এম আহসান প্রমুখ এবং প্রস্তাব পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-সংসদের ভিপি ফরিদ আহমদ। এটিই ছিল রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন নিয়ে সর্বপ্রথম সাধারণ ছাত্র সভা।
এরপর ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে আনুষ্ঠানিক আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সমর্থনে প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। এই কমিটির আহবায়ক ছিলেন তমদ্দুন মজলিশের অধ্যাপক নূরুল হক ভূঁইয়া। এদিকে ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি করাচীতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে পরিষদ সদস্যদের উর্দু বা ইংরেজিতে বক্তৃতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের কংগ্রেস দলের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এ প্রস্তাবে সংশোধনী এনে বাংলাকেও পরিষদের অন্যতম ভাষা করার দাবি জানান। কিন্তু এই অধিবেশনে পূর্ব বাঙলার মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন সদম্ভে ঘোষণা করে বলেন যে,’পূর্ব বাংলার অধিকাংশ অধিবাসীরই এই মনোভাব যে, একমাত্র উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষা রূপে গ্রহণ করা যাইতে পারে’। নাজিমুদ্দিনের এই বক্তব্যের প্রতিবাদে ঢাকাসহ পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ শুরু হয়। এসময় তমদ্দুন মজলিস, গণ আজাদী লীগ, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ ও বিভিন্ন ছাত্রাবাসের যৌথ উদ্যোগে ২রা মার্চ ফজলুল হক হলে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের এক সভায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ঐদিন এক প্রস্তাবে সারা পূর্ব বাঙলায় ১১ মার্চ সাধারণ ধর্মঘটের একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১১ মার্চ সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। ভোরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে ছাত্ররা বের হয়ে আসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণ ধর্মঘট পালিত হয়।
সেই ধর্মঘটে ৬৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ফলে ঢাকায় ১৩-১৫ মার্চ আবার ধর্মঘট পালন করে ছাত্ররা। এমন অবস্থায় বাধ্য হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ১৫ই মার্চ ৮ দফা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন এবং ১৫ই মার্চ ভাষা-আন্দোলনের বন্দী ছাত্র ও কর্মীদের মুক্তি দেয়া হয়। সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে নাজিমুদ্দিনের এই রকম চুক্তি করতে বাধ্য হওয়ার কারণ মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ ১৯ মার্চ, ১৯৪৮ ঢাকা সফরে আসছিলেন।
এই সফরে ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল সমাবেশে জিন্নাহ বলেন, ‘উর্দুই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হইবে, অন্য কোনো ভাষা নহে। যে কেহ অন্য পথে চালিত হইবে সেই পাকিস্তানের শত্রু’। এর দুইদিন পর ২৪ মার্চ কার্জন হলে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়’র সমাবর্তনে তিনি পুনরায় ঘোষণা করেন ‘Urdu and Urdu alone shall be the state language of Pakistan’. জিন্নাহ যখন বলেন, উর্দুই হবে রাষ্ট্রভাষা, তখন হলের মধ্যে বহু ছাত্র ‘না,না’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। ছাত্ররা এইদিন প্রস্তুত হয়েই গিয়েছিলেন। ২৪ শে মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় জিন্নাহ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের প্রতিনিধি দলকে সাক্ষাতদান করেন। জিন্নাহ কঠোর ভাষায় তাদেরকে শাসিয়ে দেন, ‘যে কোন অসাংবিধানিক আন্দোলন কঠোর হস্তে দাবিয়ে রাখা হবে’। ২৮শে মার্চ জিন্নাহ ঢাকা ত্যাগ করেন এবং সেদিন সন্ধ্যায় রেডিওতে তার দেয়া বক্তব্যে তার অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। এই ভাবে ১৯৪৭-৪৮ সালে সমগ্র দেশের ছাত্র ও জনগণের সমর্থিত বিরাট সম্ভাবনাময় ভাষা আন্দোলনের দুঃখজনক পরিসমাপ্তি ঘটে।
১৯৪৮ সালের নভেম্বর মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসেন। ২৭ নভেম্বর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এক সমাবেশে ভাষণ দেন। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে তাকে একটি মানপত্র দিয়ে তাতে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানানো হয়।
১৯৪৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর করাচীতে অনুষ্ঠিত নিখিল পাকিস্তান শিক্ষা সম্মেলনে বাংলা ভাষা আরবি হরফে লেখার প্রস্তাব উত্থাপন করেন তৎকালীন পাক শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান। অতঃপর ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯ তারিখে পেশোয়ারে অনুষ্ঠিত শিক্ষা উপদেষ্টা বোর্ডের সভার দ্বিতীয় অধিবেশনে তিনি বাংলা হরফকে বাদ দিয়ে তদস্থলে আরবি হরফে বাংলা লেখা প্রবর্তনের ঘোষণা দেন। তার এ ঘোষণার প্রতিবাদে ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা মোস্তফা নূর উল ইসলামের সভাপতিত্বে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন এবং নজরুল ইসলাম, আশরাফ সিদ্দিকী, ইলা দাস গুপ্ত, নূরুল ইসলাম, মমতাজ বেগম, রিজিয়া সিদ্দিকী, খলিলুর রহমান প্রমুখের সমন্বয়ে একটি বর্ণমালা সাব-কমিটি গঠন করা হয়।
১৯৫০ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি। এই কমিটি ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তবে ভাষা আন্দোলন তীব্রতা পায় ১৯৫২ সালে। সে বছর ২৭ জানুয়ারি তারিখে ঢাকার পল্টন ময়দানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে একমাত্র উর্দু’ এবং ‘উর্দু হরফে বাংলা লিখনের প্রচেষ্টা সাফল্যমণ্ডিত হচ্ছে’ বলে উক্তি করেন। তার বক্তৃতায় সারা পূর্ব বাংলায় বিক্ষোভ শুরু হয়। ২৯ জানুয়ারি তারিখে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ৩০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বানে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতীকী ধর্মঘট পালন করা হয় ও ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের আহবান করা হয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের সহযোগে এক বিরাট শোভাযাত্রা বের করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। ৩১ তারিখে নাজিমুদ্দিনের ভাষা সম্পর্কিত ঘোষণার প্রতিবাদে আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগের উদ্যোগে বার লাইব্রেরী হলে এক সর্বদলীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি মওলানা ভাসানী।
সভায় আরবি লিপিতে বাংলা লেখার সরকারি প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করা হয় এবং ৩০ শে জানুয়ারির সভায় গৃহীত ধর্মঘটের সমর্থন দেওয়া হয়। পরিষদ ২১শে ফেব্রুয়ারি হরতাল, সমাবেশ ও মিছিলের বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। এই সভায় আন্দোলন পরিচালনার জন্য সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহবায়ক নির্বাচিত হন কাজী গোলাম মাহবুব।
উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা এবং আরবি অক্ষরে বাংলা ভাষার প্রচলন করার বিরুদ্ধে ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শহরের সকল স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীগণ ধর্মঘট পালন করে। বেলা ১১টা হতে শহরের বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা শোভাযাত্রা সহকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জমায়েত হোন। গাজীউল হকের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্র ছাত্রীদের এক সভা হয়। এই সভায় বিভিন্ন শিক্ষায়তনের পক্ষ হতে ছাত্র বক্তাগণ পাকিস্তানের বৃহত্তম অংশ এই পূর্ব পাকিস্তানের নর-নারীর মুখের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষারূপে গ্রহণ করতে এবং আরবি হরফে বাংলা ভাষা প্রবর্তন না করতে দাবী করেন।
সভা শেষে প্রায় দশ হাজার ছাত্র ছাত্রী এক বিরাট শোভাযাত্রা সহকারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ হতে বের হয়ে প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমীনের বাসভবন হয়ে হাইকোর্টের সম্মুখ দিয়ে নবাবপুর রোড, পাটুয়াটুলি, আর্মানিটোলা ও নাজিমুদ্দিন রোড অতিক্রম করে। ছাত্রছাত্রীগণ ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘আরবি হরফে বাংলা লেখা চলবে না ’ প্রভৃতি স্লোগান দেয়। ২০ ফেব্রুয়ারি বুধবার ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ১৪৪ ধারার আদেশ জারী করে এক মাসের জন্য ঢাকা শহরে সভা, শোভাযাত্রা প্রভৃতি নিষেধ করেন। আদেশ জারির কারণস্বরূপ তিনি বলেন যে, ‘একদল লোক শহরে সভা,শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের প্রয়াস পাওয়ায় এবং তদদ্বারা জনসাধারণের শান্তি ও নিরাপত্তা বিনষ্ট হওয়ার আশংকা থাকায় এই ব্যবস্থা অবলম্বিত হয়েছে’।
এমতাবস্থায়, ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ৯৪, নবাবপুর রোডে অবস্থিত আওয়ামী মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের বৈঠকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা না করা প্রসঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা ও বাগবিতণ্ডার পর রাত নয়টার দিকে ভোটাভুটির দ্বারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রস্তাব গৃহীত হয়। ফজলুল হক হলের প্রতিনিধি শামসুল আলম, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক অলি আহাদ, মেডিকেল কলেজ ইউনিয়নের সভাপতি গোলাম মওলা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক আবদুল মতিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে ভোট দেন। যুবলীগের মোহাম্মদ তোয়াহা ভোট দানে বিরত ছিলেন। বাকি সবাই (১১জন ) ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার পক্ষে ভোট দেয়। এভাবে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার সিদ্ধান্ত জয় যুক্ত হয়। এমতাবস্থায় অলি আহাদের তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার দ্বারা পুরো পরিস্থিতি পাল্টে দেন।
২১ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২ টার মধ্যে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা বিচ্ছিন্নভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসে হাজির হয়। প্রায় সাড়ে ১২টার সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গাজিউল হকের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক আবদুল মতিন আন্দোলনের পূর্বাপর পর্যায় ও ১৪৪ ধারা প্রবর্তনের ফলে উদ্ভূত বিশেষ সংকটজনক পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেন এবং সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের উপরেই ১৪৪ ধারা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব ছেড়ে দিলেন। তখনই সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের পক্ষ থেকে শামসুল হক ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালানের জন্য বক্তৃতা দেন। কিন্তু আন্দোলন সম্পর্কিত ছাত্রদের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখে বিপর্যস্ত হয়ে তিনি তার সহকর্মীগণসহ সভা থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হলেন। অতঃপর ব্যাপকতর পর্যালোচনার পর ভাষার দাবিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য পরিস্থিতির মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ছাত্ররা সুদৃঢ় আত্মসচেতনতায় ঐক্যবদ্ধভাবে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে অভিমত ঘোষণা করে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সভা চলার সময় হতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার চতুর্দিকে রাইফেলধারী পুলিশ মোতায়েন ছিল। ছাত্ররা দশজন দশজন করে মিছিল নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে গেটের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এ সময় পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কাঁদনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সমবেত ছাত্ররা কাঁদনে গ্যাস নিক্ষেপের প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় ভিসি পুলিশের নিকট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপের প্রতিবাদ জানায়। রাস্তায় বের হলেই ১৪৪ ধারা অমান্য করা হয়েছে বলে পুলিশ অনেক ছাত্রকে গ্রেফতার করে এবং বহু ছাত্রকে মোটরে করে সুদূর তেজগাঁও নিয়ে ছেড়ে দেয়। ৬২ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে আটক রাখে। গ্রেফতারের ফলে ছাত্র মহলে দারুণ উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। [সৈনিক, প্রাগুক্ত] এদিকে মেডিকেল কলেজের সামনে সমাবেশের প্রস্তুতি চলছিল।
বেলা অনুমান ২ ঘটিকার সময় পরিষদের সদস্যগণ পরিষদ অভিমুখে গমনকালে ছাত্ররা পথরোধ করে পরিষদে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে আলোচনা করার ও পুলিশী জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য অনুরোধ জানায়। এ সময় রাস্তায় ছাত্রদের সমাবেশ হতে থাকে। পুলিশ জনতাকে চলে যেতে বললে তারা যেতে অস্বীকার করে। এরপর পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে ও লাঠিচার্জ করে এবং ছাত্ররা পুলিশের উপর প্রস্তরখণ্ড নিক্ষেপ করতে থাকে।
ছাত্ররা যতই স্লোগান দেয় মিছিলে একত্রিত হয়, ততই পুলিশ হানা দেয়। কয়েকবার ছাত্রদের উপর কাঁদুনে গ্যাস ছেড়ে তাড়া করতে করতে মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের ভেতরে ঢুকে পড়ে। হোস্টেল প্রাঙ্গণে ঢুকে ছাত্রদের উপর আক্রমণ করায় ছাত্ররা বাধ্য হয় ইট পাটকেল ছুড়তে। একদিকে ইট পাটকেল আর অন্যদিক থেকে তার পরিবর্তে কাঁদুনে গ্যাস আর লাঠিচার্জ আসে। পুলিশ তখন ছাত্রদের দিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। ঘটনাস্থলেই আবদুল জব্বার ও রফিকউদ্দিন আহমদ শহীদ হন। আর ১৭ জনের মতো আহত হন। তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়। তাদের মধ্যে রাত আটটার সময় আবুল বরকত শহীদ হন। গুলি চালানোর সংবাদ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে শহরের প্রান্তে প্রান্তে। তখনি অফিস আদালত, সেক্রেটারিয়েট ও বেতার কেন্দ্রের কর্মচারীরা অফিস বর্জন করে বেরিয়ে আসে। শহরের সমস্ত লোক তখন বিক্ষুব্ধ হয়ে মেডিকেল হোস্টেল প্রাঙ্গণে এসে হাজির হতে থাকে। রাস্তায় আর গলিতে গলিতে যেন ঢাকার বিক্ষুব্ধ মানুষের ঝড় বয়ে চলে প্রবল বেগে। মেডিকেল হোস্টেলের ব্যারাকে ব্যারাকে শহীদদের রক্ত রঞ্জিত বস্ত্রের পতাকা উত্তোলিত হয়েছে। মাইক দিয়ে তখন শহীদানের নাম ঠিকানা ঘোষণা করা হয়। সমস্ত মানুষের মন থেকে যেন মুহুর্তেই সমস্ত ভয় ত্রাস মুছে গেছে-চোখে মুখে সমস্ত প্রাণশক্তি দিয়ে বর্বর হত্যাকাণ্ডের প্রতিরোধের দুর্জয় শক্তি প্রকাশিত হয়েছে।
মেডিকেল হোস্টেলের ভিতর গায়ে-বানা জানাজা পড়া হয়। এদিন বিশ্ববিদ্যালয় ও পরিষদ ভবন এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। তবু জানাজায় দশ সহস্রাধিক লোক উপস্থিত হয়। জানাজার শেষে প্রায় হাজার লেকের এক মিছিল বের হয়। শহীদের রক্তাক্ত জামা কাপড় লাঠির অগ্রভাগে বেধে মাতম করতে থাকে সাধারণ মানুষ। মিছিলের মাঝখানে পুলিশ হঠাৎ লাঠিচার্জ করার পরও জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে না পেরে গুলি চালায়। এখানেই হাইকোর্টের কেরানী শফিউর রহমান শহীদ হন।
এদিন শহরের প্রত্যেক মসজিদে জুম্মার নামাজের পর শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় হাজার হাজার মুসল্লি আজিমপুর কবরস্থান হয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে জমায়েত হয়। জুম্মার নামাজের পর সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে এক বিরাট জনতার উপস্থিতিতে কোরআন তেলাওয়াতের পর এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিভিন্ন বক্তা সকালে পুলিশ ও সামরিক বাহিনী কর্তৃক এক বিরাট মিছিলে শান্তিপূর্ণভাবে যোগদানকারী জনতার উপর বেপরোয়াভাবে গুলি চালানোর তীব্র প্রতিবাদ করেন। ২১শে ফেব্রুয়ারি পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী শহীদানের সংখ্যা ৮ জন।
এদিন অপরাহ্ণে ব্যবস্থা পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত এক প্রস্তাবে গণপরিষদের নিকট বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সুপারিশ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমীন প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। এদিন আজাদ পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন পূর্ব পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেন।
২৩ ফেব্রুয়ারি শহরের সর্বত্র পূর্ণ হরতাল ও বিক্ষোভ চলতে থাকে। বহু মিলিটারি শহরের রাস্তাগুলিতে টহল দিতে থাকে। সেক্রেটারিয়েটসহ সকল অফিস আদালতে ধর্মঘট অব্যাহত থাকে। রাত ৮টা হতে ভোর ৫টা পর্যন্ত সান্ধ্য আইন প্রচলিত থাকে।
ক্রমাগত ধর্মঘটে অপেক্ষাকৃত দরিদ্রদের আর্থিক সংকটের আশংকা থাকায় এদিন সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কমিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অপরাপর প্রতিষ্ঠানের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে। কমিটির ৯ দফা দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারকে ৯৬ ঘণ্টার সময় দেয়া হয় এবং ৫ মার্চ প্রদেশের সর্বত্র শহীদ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের যেসব শহীদ বীর ২১ ও ২২ তারিখে পুলিশের নিষ্ঠুর গুলির আঘাতে বুকের রক্তে ঢাকার মাটি রাঙিয়ে দিয়েছেন তাদেরকে স্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রগণ তাদের কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে নিজ হস্তে একরাত্রির মধ্যে ১০ ফুট উচ্চ ও ৬ ফুট চওড়া একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেন।
তবে সরকার এটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে বাঙালির চেতনার জাগরণের মধ্য দিয়ে ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হামিদুর রহমানের পরিকল্পনায় শহিদ মিনারের নতুন নকশা করা হয়। এই স্থাপনার ডিজাইনে রয়েছে পাঁচটি মূল স্তম্ভ, যা শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতীক এবং বাঙালি জাতির একত্রিত শক্তির প্রতিফলন। প্রধান স্তম্ভগুলোর সাথে সামনের দিকে আরেকটি ছোট স্তম্ভ সংযুক্ত রয়েছে যা বাংলাভাষার মহিমাকে তুলে ধরে।
বস্তুত ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে পূর্ব বাংলায় জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে অর্জিত পাকিস্তানের ধ্বংসের বীজ রোপিত হয়। ’৬২-র সামরিক শাসন ও শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট বিরোধী আন্দোলন,’৬৬-র ৬দফা আন্দোলন, ’৬৯এর গণআন্দোলন, ’৭০এর নির্বাচন ও ‘৭১এর অসহযোগ আন্দোলনের সুবাদে জনগণের মনে বাঙালি জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির গভীরতা, বিস্তৃতি ও ব্যাপ্তি ঘটে।বাঙালিত্বের ভিত্তিতে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ‘৭১এর ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের বিজয় অর্জিত হয়। এর ফলে ভাষা আন্দোলনের চেতনা চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে।