বাহারি রঙের চমৎকার একটি ফুল অঞ্জন। চোখ ধাঁধানো নীল রঙের জন্য অনেকেই এই ফুলকে নীলাঞ্জন বলেও ডাকেন। গাছের ডালে এই ফুল দেখতে যেমন সুন্দর তেমনই সবুজ ঘাসের উপর ঝরে পড়া ফুল যেন নীল রঙের চাদর বিছিয়ে রাখে। এই দৃশ্যও অত্যন্ত নজরকাড়া। তবে অঞ্জন ফুলকে পুরোপুরি নীল বলা যাবে না। এই ফুল যেন রঙ নিয়ে লুকোচুরি খেলতে ভালোবাসে। গাঢ় নীল রঙের পাশাপাশি কখনও দেখতে হালকা গোলাপী, ঈষৎ বেগুনি আবার কখনও কখনও সাদা রঙের ছটাও চোখে পড়ে অঞ্জন ফুলের।
অঞ্জনের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Memecylon umbellatum.। অন্যান্য নামের মধ্যে Delek air tree, Ironwood tree, Kaya, Mandi ইত্যাদি। গাছের বাকল পাতলা হওয়ায় মালে ভাষায় এই গাছকে বলা হয় ‘নিপিস কুলিত’, অর্থাৎ ‘পাতলা বাকলি’।
এই গাছের আদি নিবাস আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারত। ভারতের কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড় অঞ্চলে অঞ্জন গাছের দেখা পাওয়া যায়। এছাড়াও থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও মালয়েশিয়ার বোর্নিওর বনে এই ফুল বেশ সহজলভ্য। তবে আমাদের দেশে হাতেগোনা কয়েকটি স্থানে দেখা মেলে অপরূপ সুন্দর এই ফুলটির।
অঞ্জন ফুল ফোটে বসন্তের মাঝামাঝি সময়ে। গাছের ডালে ডালে আর কাণ্ডের মধ্যে এই ফুল থোকা থোকা ফুটে থাকে। একেকটি থোকা প্রায় ৫ মিলিমিটার চওড়া হয়ে থাকে। অঞ্জনকে বলা যায় মধুবৃক্ষ। এই ফুলের একটা মিহি ঘ্রাণ রয়েছে। সারা গাছ জুড়েই ভ্রমর আর মৌমাছির আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। ফুলের মৌসুমে পুরো গাছটিই যেন মধুর ভাণ্ড হয়ে ওঠে।
অঞ্জন গাছ দেখতে ঝোপালো আকৃতির হয়ে থাকে। চিরসবুজ এই গাছটি উচ্চতায় তিন মিটার পর্যন্ত হতে পারে। বীজ ও কলম দুই পদ্ধতিতেই এই গাছের চারা করা যায়। অঞ্জনের পাতা গাছের পাতার অগ্রভাগ সরু, মাঝখানটা বেশ চওড়া। ডালের দুই পাশে সারি করে থাকে পাতাগুলো। পাতা থেকে হলুদ রং তৈরি হয়। প্রাচীনকালে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তাদের কাপড় রঙ করতে এ গাছের পাতা ব্যবহার করতেন বলে জানা যায়।
গাছের ডালে থোকা থোকা ফল ধরে। স্বাদে এই ফল আমাদের দেশি পাতি জামের মতোই। ফল খুব ছোট, বর্তুলাকার, মাত্র ৭ মিলিমিটার ব্যাস। ফল পাকলে প্রথমে লাল রঙ ধারণ করে, পরিপূর্ণ পাকলে কালো বর্ণ হয়ে যায়।
অঞ্জনের কাঠ বেশ মজবুত হওয়ায় এটি দিয়ে বিভিন্ন ধরণের আসবাব তৈরি করা হয়। বিশেষ করে নির্মাণ কাজে এই গাছের কাঠ বেশ জনপ্রিয় ভারতে।
আমাদের দেশে রমনা পার্ক, বলধা গার্ডেন, জাতীয় জাদুঘর এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে কয়েকটি অঞ্জন গাছ সহজে চোখে পড়ে।
অঞ্জনের ভেষজ অনেক উপকারিতা রয়েছে। মূলত শোভা বর্ধক গাছ হিসেবেই আমাদের দেশে পরিচিত হয়ে উঠেছে এই গাছটি। অনিন্দ্য সুন্দর এই ফুল গাছটি যে কারো নজর কাড়তে সক্ষম। শোভা বর্ধক গাছ হিসেবে অঞ্জন গাছের বিস্তার ঘটালে আমাদের দেশীয় প্রকৃতিতে সহজলভ্য হবে আরও একটি সুন্দর ফুল।