লজ্জাবতী গাছ কেন লজ্জা পায়

 

বাংলাদেশের গ্রামের মাঠে-ঘাটে, ঝোঁপে-ঝাড়ে খুব সহজেই চোখে পড়ে ওষুধি গুল্ম লজ্জাবতী। এই গাছের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্য একনামেই চেনে সবাই। কোন কিছুর স্পর্শ পেলে এই গাছের পাতা নিজেকে গুটিয়ে নেয় মুহূর্তেই। যেন লজ্জায় আড়াল হতে চায়। আর এই লাজুক বৈশিষ্ট্যের জন্যই একে লজ্জাবতী নামে ডাকা হয়। বাংলায় অবশ্য আরও কয়েকটি নাম রয়েছে। করপত্রাঞ্জলি বা অঞ্জলিকারিমা নামেও পরিচিত এই গাছ। ইংরেজিতে এই গাছকে sensitive plant, shameplant, touch me not বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। লজ্জাবতীর বৈজ্ঞানিক নাম Mimosa Pudica
  
কেন লজ্জাবতী গাছ স্পর্শ পেলেই নুইয়ে যায়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করেছেন বিজ্ঞানীরা। লজ্জাবতী গাছের পাতার বোঁটা ৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে। বোঁটার প্রান্ত হতে চারটি পত্রদণ্ড বের হয়। এই পত্রদণ্ড কোন কিছুর স্পর্শ পেলেই একটা তড়িৎ প্রবাহ গাছের দেহে ছড়িয়ে দেয়। অ্যাসিটাইল কোলিন নামের এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমে এই তড়িৎ প্রবাহিত হয়। রাসায়নিক পদার্থটি খুব দ্রুত এক কোষ থেকে আরেক কোষে যেতে পারে। রাসায়নিক পদার্থটির প্রভাবে পাতার গোড়ায় ফোলা কোষ থেকে খনিজ লবণসহ পানিও বের হয়ে আসে। পানি বের হলে কোষগুলো চুপসে যায়। চুপসানো কোষে পানির চাপ কম থাকে, তাই লজ্জাবতীপাতার ডাঁটা বা কাণ্ড আর সোজা থাকতে পারে না। কাণ্ড নিচের দিকে নুয়ে পড়ে।  

মূলত ঝোপেঝাড়ে বেশি দেখতে পাওয়া গেলেও এই গাছ সব রকম পরিবেশেই মানিয়ে নিতে সক্ষম। আমাদের পাহাড়ি অঞ্চুলে লজ্জাবতীর সাক্ষাৎ পাওয়া যায় বেশি। এটি এক প্রকার লতানো এবং খর্বাকৃতির গুল্ম। লজ্জাবতীর গায়ে বাঁকা কাঁটা থাকায় এর ঝোপের ভেতরে কোন সরীসৃপও প্রবেশ করতে পারে না। 

লজ্জাবতীর ফুল দেখতে গোলাকৃতির হয়। ২-৩ সেন্টিমিটার লম্বা পুষ্পদণ্ডের মাথায় অত্যন্ত নরম এবং হালকা বেগুনি রঙের ফুল ফুটে। প্রতিটি পত্রবৃন্তের গোড়া থেকে একটি করে পুষ্পদণ্ড বের হয়। লজ্জাবতী গাছে সারাবছরই ফুল এবং ফল দেখা যায়। তবে জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এর পরিমাণ বেড়ে যায়। প্রতি পুস্পদন্ডের মাথায় ১৪ -২০টি করে ফল ধরে। প্রতিটি ফল থেকে ২/৩টি বীজ পাওয়া যায়। ফলের দুই প্রান্ত ঘিরে ছোট ছোট নরম কাঁটা থাকে। বীজ পাকলে খয়েরি রঙ ধারণ করে। লজ্জাবতী ফলের মাধ্যমে বংশবিস্তার করলেও লতা রোপণ করলেও নতুন চারা পাওয়া যায়। 

ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে লজ্জাবতীর কদর রয়েছে প্রাচীনকাল থেকেই। মানবদেহের বিভিন্ন রোগ সারাতে ভেষজ চিকিতসায় এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। লজ্জাবতীর লতাপাতা ও ফুলফল পুষ্টিতে অতিসমৃদ্ধ। এতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ প্রোটিনসহ সব ধরনের খাদ্য উপাদান। বিশেষ করে এটি ভিটামিন-এ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম ও নিয়েসিনে ভরপুর। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ায় সালাদ, সবজি ও নানা প্রকার স্যুপ হিসেবে এটি খুব জনপ্রিয়। এছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশে কৃষিকাজে সবুজ সার হিসেবে লজ্জাবতী গাছের ব্যবহার রয়েছে। 

আমাদের দেশে সহজলভ্য হলেও ধীরে ধীরে এই উদ্ভিদটির পরিমাণ কমে আসছে। নির্বিচারে বন ধ্বংস, পাহা কাটার ফলে লজ্জাবতিড় মতো অনেক উপকারী উদ্ভিদই হারিয়ে যেতে বসেছে প্রকৃতি থেকে। প্রকৃতি ও পরিবেশ সুন্দর রাখতে এসব উদ্ভিদ সংরক্ষণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে সচেতনভাবে।


 

Previous Post Next Post