আমাদের প্রকৃতিতে পরিচিত উপকারী পতঙ্গের একটি হলো মৌমাছি। একে মধুমক্ষিকা বা মধুকর নামেও ডাকা হয়। ইংরেজিতে এই পতঙ্গের নাম Bee বা Honey Bee । বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর যেখানেই গাছে ফুল ফুটে সেখানেই দেখা মেলে মৌমাছির। দুরন্ত গতির নেই পতঙ্গটি প্রকৃতির জন্য ভীষণ উপকারী। এরা মধু, মোম আর ফুলের পরাগায়নের জন্য উপকারী পতঙ্গ হিসেবে প্রসিদ্ধ। পৃথিবীতে ৯টি গোত্রের প্রায় ২০ হাজার প্রজাতির মৌমাছি থাকলেও আমাদের উপমহাদেশে পাওয়া যায় মাত্র চারটি প্রজাতি। মৌমাছির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এরা মৌচাকে গোষ্ঠীবদ্ধভাবে বসবাস করে।
আকার ও কাজের ভিত্তিতে মৌমাছির তিনটি ধরন দেখা যায়। রানি মৌমাছি- এরা বংশ বিস্তার করে। ড্রোন বা পুরুষ মৌমাছি। আর রয়েছে কর্মী মৌমাছি – এদের কাজ মধু সংগ্রহ করা।
কর্মী মৌমাছির কারণেই বলা হয়ে থাকে পৃথিবী টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে এই পতঙ্গের রয়েছে অনেক অবদান। কেননা মৌমাছি এবং অন্যান্য কীট পতঙ্গের জন্য গাছে গাছে ফুল ফুটে, ফল হয়। যার মাধ্যমে গাছ নতুন বংশ বিস্তার করতে পারে। পৃথিবীর বন্য উদ্ভিদের ৯০ ভাগ পরাগায়ন ঘটে মৌমাছির সাহায্যে।
মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে এবং জমায় মূলত তাদের ভবিষ্যত সঞ্চয় হিসেবে। প্রয়োজনের তুলনায় ২-৩ গুণ মধু থাকে একেকটি মৌচাকে। মৌচাকের নেতৃত্বে থাকে এক বা একাধিক রানি মৌমাছি। এই মৌমাছির কাজ হলো পুরুষ মৌমাছির সাহায্য নিয়ে বংশ বিস্তারে ভূমিকা রাখা। রানি মৌমাছি মারা গেলে সদ্য জন্মানো কোন মৌমাছিকে বিশেষ এক ধরনের জেলি জাতীয় পদার্থ খাওয়ানো হয়। রয়্যাল জেলি নামের এই পদার্থ খাওয়ার ফলে সেই মৌমাছিটি দ্রুত বড় হয় এবং রানি মৌমাছিতে পরিণত হয়। একেকটি রানি মৌমাছি দিনে আড়াই হাজার পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। কর্মী মৌমাছির আয়ু এক থেকে দেড় মাস হলেও রানি মৌমাছি ৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
আকারে ছোট হলেও মৌমাছির রয়েছে অনেক গুণ। দুই পাশে দুটি করে ছোট চারটি ডানা নিয়েও এদের ৩৫ কিলোমিটার বেগে উড়ার ক্ষমতা রয়েছে। প্রতি সেকেন্ডে এরা ডানা ঝাপটায় প্রায় ২৪০ বার। একটি ক্ষুধার্ত মৌমাছি মধু সংগ্রহের জন্য দিনে ১০ কিলোমিটার পথও পাড়ি দিতে পারে। তবে সাধারণত এদের আনাগোনা থাকে মৌচাকের ৩ কিলোমিটারের মধ্যেই। অসাধারণ ঘ্রাণ শক্তির জোরে এরা ফুলের মধু সংগ্রহ এবং নিজেদের চাক চিনে নিতে পারে। ঘ্রাণ নেবার জন্য এদের ১৭০টি রিসিপ্টর রয়েছে। একেকটি মৌমাছি দিনে প্রায় ২ হাজার মৌচাকে উড়ে বেড়ায় মধু সংগ্রহের জন্য। এক কিলোগ্রাম মধু সংগ্রহের জন্য
সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা হলো মৌমাছি গণিত জানে। মৌমাছির চাকের দিকে তাকালেই বোঝা যায় এখানে রয়েছে নিপুণ গাণিতিক কারুকার্য। প্রত্যেকটি চাকের ভেতরে মধু রাখার ছোট্ট কুঠুরি রয়েছে। প্রতিটি কুঠুরি সমান মাপের এবং ষড়ভূজাকার। এমন আকারের না হয়ে যদি গোলাকার হতো তাহলে একই জায়গায় এত পরিমাণ মধু রাখা যেত না। শুধু তাই নয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মৌমাছির মধ্যে যোগ, বিয়োগের ধারণাও আছে।