বাংলাদেশের
সুন্দর প্রকৃতি হলো বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন পাখির আবাসস্থল। এরমধ্যে অন্যতম হলো বসন্ত
বৌরি,
যার পুরো বিশ্বে ২৪টি প্রজাতি পাওয়া গেলেও আমাদের দেশে ৫টি
প্রজাতি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো নীলগলা বসন্ত বৌরি।
নীলগলা
বসন্ত বৌরি বা Blue-throated Barbet হলো বাংলাদেশের
একটি সুলভ আবাসিক পাখি। এই পাখিকে ধনিয়া পাখি নামেও ডাকা হয়। এটি সারা দেশেই পাওয়া যায়, পাশাপাশি পাকিস্তান, হিমালয়ের পাদদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার এবং থাইল্যান্ডেও এর দেখা মেলে।
নীলগলা
বসন্ত বৌরি মাঝারি আকারের একটি পাখি। এর ঠোঁট শক্ত এবং ৩ সেন্টিমিটার দীর্ঘ। নাকের
ছিদ্র পালক দ্বারা ঢাকা। শরীরের রঙ কলাপাতা সবুজ, দৈর্ঘ্য ২৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। ওজন সাধারণত ৭৫-৮০ গ্রাম।
নীলগলা
বসন্ত বৌরির সবচেয়ে চোখ-ধাঁধানো বৈশিষ্ট্য হলো গলা এবং মাথার উজ্জ্বল নীল রঙ।
মাথার দিকে একটি লাল পট্টি রয়েছে যা একে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে। নীল রঙ চিবুক ও
গলা থেকে বুকের উপরিভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত। দেহের পাশে লাল রঙের দাগ রয়েছে। চোখের
উপর কালো ডোরা রয়েছে। চোখ লালচে-বাদামি, চোখের কিনারা কমলা-হলুদ। পা এবং পায়ের পাতা সবুজাভ, পায়ের আকার ৩ সেন্টিমিটার। লেজটি ঘাস সবুজ বর্ণের, দৈর্ঘ্য ৭ সেন্টিমিটার। স্ত্রী এবং পুরুষ পাখি দেখতে একই
রকম,
তবে অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখিদের মাথায় অনুজ্জ্বল সবুজ এবং কালো
রঙের আধিক্য থাকে।
নীলগলা
বসন্ত বৌরি সাধারণত একা বা জোড় বেঁধে চলে। দলবদ্ধভাবে এদের খুব কমই দেখা যায়। এদের
খাবারের তালিকায় প্রধানত ফল এবং পোকামাকড় রয়েছে। বিশেষ করে এরা উড়ন্ত উইপোকা
শিকার করতে পছন্দ করে।
প্রজনন
ঋতুতে পুরুষ নীলগলা বসন্ত বৌরির ডাক বেড়ে যায়। সঙ্গী খোঁজার জন্য পুরুষ পাখিদের
মধ্যে ডাকাডাকির প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। এরা দীর্ঘ সময় ধরে একটানা ডাকতে পারে।
নীলগলা বসন্তবৌরি
গাছের নরম ডালে গর্ত করে বাসা তৈরি করে। বাসা তৈরির জন্য কাঁঠাল, আম, জলপাই গাছ এই
পাখির বিশেষ পছন্দ। নতুন বাসায় স্ত্রী পাখি ৩-৪টি সাদা রঙের ডিম পাড়ে। বাচ্চা ফোটার
পর স্ত্রী-পুরুষ মিলেই বাচ্চার যত্ন নিয়ে থাকে।