রমনা পার্কের লেকের পাড় ধরে খানিকটা এগোতেই চোখে পড়লো ঝলমল করে হাসছে মাধবীলতা ফুল। গোটা তিনেক মাধবীলতা গাছে ফুলে ছেয়ে আছে বসন্তের শুরুর সময়টা। হুট করে চোখ আটকে গেলো একটা ডালে। থোকায় থোকায় ঝুলে আছে ধবধবে সাদা ফুল। এত বড় আর নয়ন ভুলানো এই ফুলের রূপে চোখ আটকে যাবে যে কারো।
একটা মাধবীলতার ঝোপ ধরে বেড়ে উঠেছে গাছটি। একটু ঘাঁটাঘাঁটি করেই পরিচয় মিললো। খুবই দুর্লভ প্রজাতির ফুল নাম বিউমনটিয়া। Easter lily vine, herald's trumpet এবং Nepal trumpet flower নামে ইংরেজিতে ডাকা হয় এই ফুলকে। আর বৈজ্ঞানিক নাম Beaumontia grandiflora । এই ফুলটি আমাদের অঞ্চলের হলেও এর কোন বাংলা নামই খুঁজে পেলাম না। এত চমৎকার একটি ফুলের বাংলা নাম থাকবে না, অথচ আমাদের অঞ্চলের গাছ। আমার একে আদর করে ডাকতে ইচ্ছে হলো ‘চন্দ্রকুসুম’ নামে। এই নামটিই আসলে যায় এর রূপের শোভার সাথে।
বিউমনটিয়া বা চন্দ্রকুসুম বছরে দুইবার ফুল দেয়। শীত শেষ হয়ে বসন্তের শুরুর দিকে ফুল দিতে শুরু করে। এরপর আরেকবার ফুল আসে বর্ষা শেষে শরতের শুরুতে। এই ফুল একসাথে কয়েকটি ফোটে একটি ছড়ায়। যদিও কাষ্ঠল লতানো গাছ, তবে একেকটি গাছ ৩০ ফুটেরও বেশি লম্বা হয়ে থাকে। এই গাছের পাতা চিরসবুজ এবং আকারে প্রায় ৯ ইঞ্চি অবধি হতে পারে।
বিউমনটিয়া ফুল আকারে ৩-৬ ইঞ্চি অবধি লম্বা এবং ৪ ইঞ্চি চওড়া হয়ে থাকে। এই ফুলের চমৎকার সুবাস রয়েছে। শুভ্র এই ফুলের টার্মিনাল ক্লাস্টার দেখা যায় যা ট্রাম্পেট আকৃতির এবং ইস্টার লিলির মতো। পুষ্পবৃন্ত রোমশ। ফুল সাদা রঙের, সুগন্ধিযুক্ত ও বেশ বড়। ঘণ্টাকার ও মসৃণ। খাটো, ডান দিকে পাকানো। ফল হয়ে থাকে আষাঢ় ও মাঘে। বীজচাপা ও গুচ্ছিত। বীজ ও কাটিং থেকে চারা তৈরি করা যায়। চমৎকার আকৃতি এবং ধবধবে সাদা রঙের জন্য এই ফুল খুব সহজেই নজরে পড়বে।
বিউমনটিয়া বা চন্দ্রকুসুম ফুল মূলত উঁচু পাহাড়ের ঘন অরণ্যে জন্মায়। বিশেষ করে বাংলাদেশের সিলেট এবং চট্টগ্রামের পাহাড়, মায়ানমার, ভারতের আসাম, নেপাল এবং দক্ষিণ পূর্ব তিব্বতে সচরাচর চোখে পড়ে। তবে বর্তমানে এই ফুলকে দুর্লভ ফুলই বলা যায়। ঢাকা শহরে রমনা পার্কে এই ফুল রয়েছে।
তবে এই ফুলের ইংরেজি নামের একটা ইতিহাস অবশ্য পাওয়া যায়। ইয়র্কশায়ারের মিসেস ডায়ানা বিউমন্ট (১৭৬৫-১৮৩১) এর সম্মানে ।