ফসলের উপকারী বন্ধু গো শালিক পাখি

 


বাংলাদেশের প্রকৃতিতে সহজে দৃশ্যমান পাখি গো শালিক। সারা দেশেই এই পাখিকে বিচরণ করতে দেখা যায়। সকলের কাছি পরিচিত এই পাখির বেশ কয়েকটি নাম রয়েছে। কেউ কেউ একে ডাকেন গোবরে শালিক, পাকড়া শালিক, গোচ্ছনা কিংবা গো সারো নামে।  ইংরেজিতে এই পাখিকে ডাকা হয় Asian Pied Starling নামে। আর  বৈজ্ঞানিক নাম Sturnus Contra।

আকৃতিতে মাঝারি আকারের হয়ে থাকে গো শালিক পাখি। দেহের গড় দৈর্ঘ্য হয়ে থাকে ২২-২৪ সেন্টিমিটার। ওজনেও খুব বেশি নয় এই পাখিটি। বয়সভেদে ৬০-৮০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন হতে পারে বহুল পরিচিত পাখি গো শালিকের। তবে দেখতে বেশ সুন্দর একটি পাখি গো শালিক। দুটি চোখ দেখতে কালো পুঁতির মতো। চোখের দুইপাশে রয়েছে লম্বা সাদা পালকের রেখা। ডানার দুইপাশেও এই রেখা দেখা যায়। যার জন্য এই পাখিকে দেখতে অনেক আকর্ষণীয় লাগে। গলা, ঘাড় এবং মাথার রঙ ঘন কালো। ঠোঁট আগার দিকে সাদা এবং গোঁড়ার দিকে কমলা রঙের হয়ে থাকে। পেটের দিকের অংশ সাদাটে হয়ে থাকে। ধূসর কালো বর্ণের পিঠ আর পায়ের রঙ হয় হলুদ। 

স্ত্রী আর পুরুষ গো শালিক দেখতে একই রকম। প্রজনন মৌসুম ছাড়া এদেরকে আলাদাভাবে বোঝার উপায় নেই। প্রজনন মৌসুমে এদের ঠোঁটের রঙ পালটে যায়। তবে বাচ্চা গো শালিকের গায়ের রঙ গাঢ় বাদামি হয়ে থাকে। 

এদের প্রজনন মৌসুম অনেক লম্বা। মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর অবধি এই পাখি প্রজনন করে থাকে। প্রজননের তাগিদে গো শালিক বাসা তৈরি করে। ছানার নিরাপত্তার জন্য এরা কাঁটাযুক্ত গাছে বাসা তৈরি করে। যাতে করে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।  এদের বাসার ধরণ বেশ অগোছালো। খড়, শুকনো ঘাস এবং যেখানে যা পায় তাই দিয়ে বাসা বানায় এই পাখিটি। বাসা বানানোর পর স্ত্রী পাখি ৬টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। ডিমের রঙ হয় ফ্যাকাশে নীল বা ঈষৎ সবুজ। যাতে বাদামি দাগ দেখা যায়। ডিম ফুটে বাচ্চা হতে দুই সপ্তাহ সময় লাগে। এসময় স্ত্রী-পুরুষ উভয়েই ছানার দেখভালের দায়িত্ব নিয়ে থাকে। 

ধানকাটা হয়ে গেলে এই পাখিকে দলবেঁধে খাবার খুঁজতে দেখা যায় মাঠে মাঠে। গো শালিক পাখির প্রধান খাবারের মধ্যে রয়েছে কেঁচো ও বিভিন্ন রকমের পোকা মাকড়। তবে মান্দার ও শিমুল গাছে ফুল ফুটলে এই পাখিকে প্রচুর দেখা যায় এসব গাছে। মান্দার ও শিমুল ফুলের মধ্যে গো শালিকের বিশেষ পছন্দের খাবার। 

সুন্দরবন ছাড়া দেশের সর্বত্র এই পাখি দেখা গেলেও ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে এই পাখির সংখ্যা। ফসলের মধ্যে অবাধ কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে বিষাক্রান্ত পোকা মাকড় খেয়ে মারা যাচ্ছে গো শালিকসহ অন্য অনেক পাখিও। এছাড়াও ফসল রক্ষার জন্য কৃষকদের বিভিন্ন রকম জাল ব্যবহারের ফলে মারা পড়ছে নিরীহ এই পাখিটি। 


Previous Post Next Post